সিত্রাং ও সতর্কতাসংকেত

সিত্রাং ও সতর্কতাসংকেত 

বিভাবসু 

সতর্কতা আর অতিসতর্কতা এক জিনিস  নয় একথা আমরা জানি। ধরে আনতে বললে বেঁধে যে আনে আমরা তাকে ধান্দাবাজ বলি। বলি লোকটার নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে। 

ব্যবসায়ী নিউজ চ্যানেলগুলো সংবাদ দেয় না, ভয় দেখায়। একটা তুচ্ছতম ঘটনাকে, বিশেষকরে যখন ব্রেকিং নিউজ থাকে না, তারা হার্টব্রেকিং পর্যায়ে পৌঁছে দেয়, ষাঁড়ের মতো চোখ লাল করে চিল্লায়। দর্শকশ্রোতাকে বোঝায়, এইটে মানব সভ্যতার ভয়ঙ্করতম দুর্ঘটনা। কেন? ধান্দায়। মানুষকে বিব্রত করে তারা টিয়ারপি বাড়াতে চায়। 

ধর্ম মানুষকে নিরন্তর ভয় দেখিয়ে চলে। কারণ ওই একই। যতো ভয় দেখানো যাবে ততো বেশি বেশি কাস্টমার জুটবে। আয়ের প্রবাহ স্টেবেল হবে। ভয় দেখানোর অধিকার চলে যাবার ভয়ে তাই ‘বিসর্জন’-এর রঘুপতি ক্ষেপে যায়।

রাজাও ভয় দেখায়। সে 'মুক্তধারা'র রাজা বলুন বা ‘রক্তকরবী'র। এ রাজা গোবিন্দমাণিক্য নন। গোবিন্দমাণিক্য ব্যতিক্রমী। রাজা তার রাজধর্ম তথা প্রজাপালনের  দায় ঝেড়ে ফেলে প্রজাপীড়ক হয়ে ওঠে। কারণ তাতে পরিশ্রম কম। মাথা খাটাতে হয় না। অল্প পরিশ্রমে জাঁকজমকে থাকা যায়। আর কিছু না দিয়ে প্রজাকে বশে রাখতে গেলে ভয় দরকার। ভয় মানে লাঠি। আর লাঠি ব্যবহার করতে দরকার লেঠেল। আধুনিক কালের সরকারি লেঠেল হোলো পুলিশ। 

ইদানিংকালে দেখছি প্রাকৃতিক দুর্যোগকেও ভয়ের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে আম্ফানের পরে। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকায় থাকে সরকার আর গণমাধ্যম। অথচ বঙ্গীয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের জনজাতিরা যুগ যুগ ধরে আম্ফানের চেয়ে শক্তিশালী ঝড় বা ভয়াবহ বন্যার সাথে লড়াই করে আসছে। এটার সাথে লড়াই করা তার রক্তে রয়েছে।এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সতর্ক এবং প্রস্তুত থাকা ভালো। তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমানো যায়। কিন্তু যখন কোনো প্রতিষ্ঠান এরজন্য অন্য সব কাজ বন্ধ রেখে শুধু মানুষকে ভয় দেখাতে থাকে, সতর্কতার বদলে ভীত এবং প্রস্তুত থাকার বদলে অপ্রস্তুত, বিব্রত করে তোলে তখন মনে সন্দেহ জাগাটা স্বাভাবিক। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে একশ্রেণির মানুষের যে পোয়াবারো হয় তা তো ভারতীয় উপমহাদেশের পাবলিকের জানতে বাকি নেই। 'আঙুল ফুলে কলাগাছ' প্রবাদটি আমাদেরই সৃষ্টি। এ ব্যপারে রাজনৈতিক নেতাদের মহান ভূমিকাও সর্বজনবিদিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধ (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা 'ম্যানমেড') অনেকসময় বিপদগ্রস্ত রাজা-রানিকে তাৎক্ষণিক রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করে। 

যে কোনো খেলার ফলাফল অনিশ্চিত। যে যেকেউই জিততে পারে। কিন্তু দলের সমর্থকেরা ভাবে তার দলই জিতবে। মোহান্ধ হয়ে তারা বাস্তবতাকে ভুলে যায়।এই অনিশ্চয়তাকে কাজে লাগিয়ে জুয়া খেলা হয়। যারা মানুষের মনস্তত্ত্বেঅপব্যবহার করে জুয়া খেলার আয়োজন করে তারা ধান্দাবাজ। 

একই রকমভাবে, ঝড়-ঝঞ্ঝার মতো প্রাকৃতিক বিষয়ও অনিশ্চিত। পূর্বাভাষ অনুযায়ী সেটা হতেও পারে, নাও পারে। যখন কেউ বা কোনো সংস্থা এরকম অনিশ্চিত বিষয়কে অনিবার্য বলে প্রচার করতে থাকে তখন তার উদ্দেশ্যের মধ্যে কোনো ধান্দা আছে বলেই মনে হয়। সিত্রাং নিয়ে অতিপ্রচার, অতিপ্রস্তুতি আমার মনে কেন জানি তেমনই ভাবনা নিয়ে এলো। 

আচ্ছা সিত্রাং যখন পথ বদলালো তখন কি এই প্রচারকো খানিকটা হতাশ হল?

চটি মানুষকে ভয় দেখানোর একটা সাধারণ অস্ত্র। চটি পা থেকে যখন হাতে ওঠে তখন তা বিপরীত দিকের পক্ষে ভয়ঙ্কর এবং লজ্জার হয়ে ওঠে। রামায়ণের রামচন্দ্রের চটিই একমাত্র চটি যা সিংহাসনে বসার অধিকার পেয়েছিলো! অবশ্য সেটা চটির পূর্বপুরুষ, খড়ম ছিলো।


[আসলে সকাল থেকে বসে বসে ঝড়ের গতিপ্রকৃতি দেখছিলাম। হঠাৎ দেখি কখন জানি একটা চটির (বই নয়) ছবি এঁকে ফেলেছি। সেটাতে একটু এফেক্ট টেফেক্ট মেরে এখানে রাখলাম। বাদবাকি যা তা কেবলই কথার কথা।]

২৪.১০.২২

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন